Blog Details

img
Share On

শাকসবজি রপ্তানিতে কেন পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ

শাকসবজি রপ্তানিতে কেন পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ

রপ্তানি কমে যাওয়ার বড় কারণ প্রতিযোগী দেশ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপালের চেয়ে ঢাকা থেকে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের খরচ বেশি।

বাংলাদেশ এখন প্রতিদিনই কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে লাউ, কুমড়া, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বিশ্বের অনেকগুলো দেশে রপ্তানি করছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। তিন বছর আগেও বছরে ১৬ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি হতো। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি কমতে থাকে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শাকসবজি তথা কৃষিপণ্য রপ্তানি ভয়াবহভাবে কমে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য। তার মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি কমেছে ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

করোনার সময়ে, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়। মহামারির শুরুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বেশ কিছুদিন আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ওই বছর সবজি রপ্তানি কমে যায়। পরের বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রপ্তানি বাড়েনি। উল্টো ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি হয় ৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের শাকসবজি।

এ খাতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, শাকসবজি রপ্তানি নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি কমে যাওয়ার বড় কারণ হলো প্রতিযোগী দেশ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপালের চেয়ে ঢাকা থেকে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের খরচ বেশি। সে জন্য শাকসবজির রপ্তানি বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দেশে শাকসবজির দামও বাড়তি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বেশ কিছু কারণে শাকসবজি রপ্তানি কমেছে। বিমানবন্দরে স্ক্যানার নষ্ট ছিল কিছুদিন। অন্যদিকে কার্গোভাড়াও বেশি। তবে বর্তমানে রপ্তানি কিছুটা উন্নতির দিকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বাহরাইন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, কুয়েত, লেবানন, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নেপাল, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সুইডেন, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে শাকসবজি রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ ছয় বাজারের মধ্যে চারটিতেই শাকসবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে ৬৭ লাখ ডলারের শাকসবজি। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের শাকসবজি। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কুয়েত ও ইতালিতে রপ্তানি কমেছে। তবে সংযুক্ত আবার আমিরাত (ইউএই), কাতার ও সৌদি আরবে রপ্তানি বেড়েছে।

আলাপকালে কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, শাকসবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমানে ভারত। দেশটি থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের যেকোনো গন্তব্যে আকাশপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ খরচ কম হয়। বিমান বাংলাদেশ হুটহাট ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিদেশি আমদানিকারকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আবার দেশে প্রতি ডলারের বিপরীতে রপ্তানিকারকেরা পাচ্ছেন ১০৩ টাকা। কিন্তু কার্গোভাড়া বাবদ তাঁদের ডলারপ্রতি ১০৪ টাকা ১৫ পয়সা করে দিতে হচ্ছে। মূলত কার্গোভাড়া বেশি হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে।

ভারত যে শাকসবজি রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তা দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানও প্রমাণ দিচ্ছে। দেশটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৪৮ হাজার টন শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে, যা পরের বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার টনে।

জানতে চাইলে বিএফভিএপিইএর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘আমাদের শাকসবজির বাজার হাতছাড়া হয়ে গেছে। ভারতে কার্গোভাড়া বেড়ে গেলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটা চোখে পড়ে না। শাকসবজি রপ্তানির জন্য স্থিতিশীল কার্গোভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কোনো রকম আগাম নোটিশ ছাড়াই বিমান বাংলাদেশ কার্গোভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তাতে আমদানিকারকেরা বিরক্ত হন, বাজারও হাতছাড়া হয়।’

আলাপকালে মোহাম্মদ মনসুর পুরান ঢাকার শ্যামপুর বিসিক শিল্পনগরীতে বেহাল সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসের কথা তুলে ধরেন। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে আসা শাকসবজি ঠান্ডা করার কোনো যন্ত্র নেই। গত পাঁচ বছরে প্যাকিং হাউসটির সংস্কার না করায় আগের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা কমেছে।